অহনা সরকারের কবিতা
দৃশ্যের সপাৎ
অহনা সরকার
সকাল থেকে উঠে আমার কাজ বসে থাকা, নিজের সামনে একটা আয়না রাখলে দেখা যেত ভোর তার বাক্যহীন চালচলন
আমার কি হয়েছে যে বুঝি না বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে হাঁটছি হাঁটছি নীল আকাশ সাদা ধোঁয়া কালোয় কিছু পর পরই রাস্তায় চলছি ফাঁকা বা জনবিহ্বল চায়ের দোকান বসলামও একটু হয়তো বাস ছেড়ে দিয়েছে কি মনে হতে আমি বাসে সিট বসার নেই দরজায় দাঁড়িয়েছি
মানুষ আমাকে দেখছে, আমিও মানুষদের দুজনের দেখার ভাব আলাদা সম্পূর্ণ তারা কি আমার ভেতর দেখছে বা না জানি খুঁজছে আমি পাহাড় জঙ্গল চরিত্রের পাশ দিয়ে ঢুকে মাথা ভুরুর মাঝ সেখান থেকে দক্ষিণ কান্ড দেখছি ফোরহেড কোর্টেক্স মেমারি
এক জবার গাছ স্মৃতি চিহ্নের পাশে আ য় য় হ্ ছায়া ছায়া বেশ দেখে সেখানে বসেছি
জবার ডাল কাঁঠালের চারা সন্ধিক্ষণের মানুষজন এক চুটকি গন্ধ কিভাবে ঢুকে যেন এখন এই জবার নিচে সেও তার
রিক্সা সাইকেল গাড়ির হর্ণ রোদ
এখন আবার আমি বিছানায় সামনে আয়না নিজেকে দেখছি নিজের মাথার ভেতর ঢুকে ছায়া নয় প্রতিবিম্ব আমার চোখ মাথার ভিতর হয়ে কে ঠিক তাকানো কার দিকে কর্নিয়া অক্ষিগোলক প্রশয়ের চাবি
মানুষের মাথা
মানুষের মাথা, স্পেশালি যেখানে ভাষার গহ্বর ভাষা প্রসেস, অর্থাৎ কিনা ধরে নেওয়া যাক আমরা কোনো ভাষা জানি না, নিজের ভাবনা নিজের কাছে এক্সপ্রেস করতেও ভাষা লাগে, তাহলে কি ভাষা ছাড়া ভাবনার জন্ম হয় না? ভাবনা তো চলছে সবসময় ভাষা আবিষ্কারের আগে বা পরে
সামাজিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, কগনিটিভ বিভিন্ন কারণ ও যোগাযোগ অন্যের সাথে মাথায় বিভিন্ন বিষয়ের জমা ভাঁড়ার ঘর
আজ ডাল রাঁধবো না শূন্য তর্ক চলছে কারণ মাথায় ডাল রান্না দুটোরই অবস্থান পাকা তারা এসে হাতাহাতি লাগিয়েছে - দ্বন্দ্ব বোধ
অজানার ভয় কাটাতে পারলে প্রবেশ নচেৎ
সেদ্ধ ডালের গন্ধ, নুন, কাঁচা লঙ্কা নুনে ভেঙে সরষের তেলে ভাজা ডিম বা চিংড়ি মাছ অভিযানের মুখ ঘুরিয়েছে
প্রতিবিম্ব প্রবেশ জানলার বিরাট খোলা আলোর বিশাল সেখান থেকেই মাথাকে দেখছি
চোখ নেই
তাকিয়ে থাকলে একসময় গাছ ফোটে আকৃতির কাঁসর ঘন্টায় গাছ, লাল সুতোয় বাঁধা আরতি ধূপ ধুনোর স্তুপ, গভীরে একা মোম গন্ধের গুঁড়ো আতরে ভেঙে
জলে ঠান্ডায় বিষাক্ত সবুজের ঘোলাটে বাণী এভাবে ওই বাঁক পর্যন্ত নদী তারপরেই পাড়ের ধাক্কায় লতা পাতায় আটকানো পাঁউরুটির টুকরো মাছেরা কপাৎ গিলেছে
এ দৃশ্য সারাদিন কোথাও না কোথাও পৃথিবীর চলছে সর্বত্র
তার বাইরে কি ভাবলেন?
সবাই কেমন দূর থেকে চলে আরো দূরে যাচ্ছে আমি কেবল বিছানা জানলার পাশ ওই গাছের নাম জানা এতদিনেও না হলো এবারও ও গা ভর্তি শুঁয়োপোকা
রঙের সাথে রঙ বিভিন্ন মিলিয়ে বা যাচ্ছেতাই একলায় কাকতালীয় মন
হাইফেনকে ডানা দিলে সেও পাখি হয়েছে।
তারপর?
তারপর আবার কি কপালের ঠিক মাঝখান চোখ ধীরে ধীরে
বেগুনী গাঢ় বেগুনী রাস্তা
আশ্বিন মাসের কোনো এক সকাল বা ছাপাখানার গলি পোড়া মোবিলের গন্ধ
-----------------------------------
অহনা সরকারের প্রকাশিত কবিতার বই :—
শুরু, যারপরনাই সন্ধিগ্ধ এক চৈতি (২০১৯)
এত রঙ বলতে নেই মেঘ (২০২৩)
ব্যবহৃত চিত্র 'কমপোজিশান' (১৯২৮), শিল্পী— রাশিয়ান চিত্রকর Wassily Kandinsky
Comments
Post a Comment