পবিত্র সাঁফুইয়ের গল্প

 







প বি ত্র   সাঁ ফু ই

নাক বরাবর



সর্বসম্মতিক্রমে এগনোর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু মনের ভিতর একটা খুঁতখুঁতানি।


সরোজিনীর আপত্তি ছিল, "এগিয়ে যাওয়া ব্যাপারটা কী? ডানে, না বামে, কোনদিকে আমাদের গন্তব্য? পিছনের দিকের পথেও কি এগনো যায় না!"

সমীরের যুক্তি, "পিছনের পথ তো চেনা। সে পথ তো আমরা ফেলে এসেছি।"

সরোজিনী বলল, "কিন্তু, এগিয়েছি কি? তুমি কি নিশ্চিত যে পেছতে পেছতে এখানে আসোনি? এরকম পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়া এগিয়ে যাওয়ারই সমার্থক।"


কেউই ফিরতে আগ্রহী নয়। গোপনে ভেবেছিলাম সরোজ ফিরে গেলে আমিও যাব। ও জেদাজেদি করেনি দেখে নিশ্চিন্ত হলাম।

এরপর ডান-বাম নিয়ে আলোচনা চলল একপ্রস্থ। 

কেউ কেউ ডানের সমর্থনে হাত তুলল, বামের হয়ে বলার মতো লোকেরও অভাব ছিল না।

দুটোই বাতিল করতে হলো সঙ্ঘবদ্ধতার খাতিরে। অভ্যাসবশত নাক বরাবর যাওয়াই স্থির হলো। কেউই আর আনাচ-কানাচ, গলি-ঘুঁজি নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস পেলো না। সর্বসম্মতি বিষয়টি আসলে সমবেত সমঝোতা, বোঝা গেলো।


অজিতের মাথায় অন্যরকম জ্যামিতি, "আমরা তো কেউই নিজের নাকটা প্রায় দেখতে পাই না। নাক বরাবর যাচ্ছি বুঝব কী করে? তাছাড়া নাকের দিকে বেশী মনোযোগ দিলে হোঁচট খেতে হতে পারে।"

সমস্যা ক্রমে ঘন হচ্ছে।

পল্টু বলল, "আমি তো ট্যারা। নিজের নাকের দিকে তাকিয়ে আমি কি পারব অন্যদের সঙ্গে একপথের পথিক হতে! তাছাড়া, নিজের নাকের তালে পা মেলাতে গিয়ে অন্যদেরকেও দেখতে পাব না। ফলে পথ হারানোর সম্ভাবনা প্রবল।"

আবার শুরু হলো মিটিং। বিস্তর আলাপালোচনার পর প্রায় সকলেই একমত, নাক বরাবর এগোনো মোটেই সহজ নয়। নাকের চেয়ে চোখ-কানের ভূমিকাটা বেশী।

চোখ বোজা অবস্থায় হাঁড়িভাঙা খেলার মতো মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়ার সমস্যার কথা উঠলো। অনেকে অবশ্য কানের উপর নির্ভরশীল। নানান শব্দের উৎস ও তাৎপর্য বিবেচনা করে হাঁড়ি ভাঙা যায় কখনও-সখনও।

শেষমেশ সকলেই একমতনাক, চোখ ও কানের গভীর বোঝাপড়া ছাড়া নাক বরাবর এগনো অসম্ভব। কারণ, এই ধনধান্য পুষ্প ভরা দেশে ফুলের গন্ধে হাঁচি-কাশি হলে নাক ঘুরেও যেতে পারে।


অতএব জরুরী ছিল এক ব্যান্ডমাস্টার। সবকটা নাক পারস্পরিক সমান্তরাল অবস্থান বজায় রাখছে কিনা সেই নজরদারিই ছিল তার কাজ। এতে অবশ্য আমাদের গতি কিছুটা মন্থর হবে। আর আমাদের এগোনোর স্বার্থে তাকেও পিছপা হতে হবে। তিনি থাকবেন সকলের সামনে। আমরা তাকে অতিক্রম করতে পারব না।

দু-একজন অপরিণতমনস্ক প্রশ্ন তুলেছিল, "এত কষ্ট করে একসাথে এগোনোর দরকারটা কী? যে যার মতো এগোক না...! একসঙ্গে থাকতে গেলে তো শুয়ে বা বসে থাকাটাই যথেষ্ট।"

ওদের প্রস্তাবকে ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নি। মানুষ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বলেই না সভ্যতা চলমান।



...............................................................

পবিত্র সাঁফুই






প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ- সাকি নাচছে (২০১৬)

প্রকাশক-পরশ পাথর 














~শুরুতে ব্যবহৃত চিত্র- উত্তর আয়ারল্যান্ডের তরুণ শিল্পী ব্রায়ান কিল্টের 'প্রসেশান স্টাডি' সিরিজের অন্যতম।

~গল্পকারের আলোকচিত্র- প্রশান্ত হালদার   


Comments

Popular posts from this blog

সরসিজ বসুর সাক্ষাৎকার। স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্ত

তদোগেন গিরতের 'যে কথা মরমে বাজার নয়'

প্রশান্ত হালদারের কবিতা—জন্মদিনে মদ খাও বন্ধুরা