ভাষাবাহিত রোগশোক : বিশ্বনাথ পুরকাইতের নতুন কবিতার বই
বিশ্বনাথ পুরকাইত। নাম তথাকথিত অচেনা, অন্তত সুপরিচিত তো নয়। আজকালকার প্যারালাল মহাকবি হয়ে ওঠার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে প্রায় আড়াই/তিন দশক কবিতা চর্চ্চার শেষে সাকুল্যে সাড়ে ন'ফর্মার কবিতার বই হয়ে উঠেছে তাঁর। 'নিম্নচাপের দিনগুলি' (১৯৯৮)। 'শান্তি-শৃঙ্খলা' (২০০৩)। 'খণ্ড-চৈতন্য' (২০০৭)। 'মিশ্রপ্রতিক্রিয়া' (২০১৩)। 'ভাষাবাহিত রোগশোক' (২০১৮)।
৯০-এর দশকের পুনঃলোকপ্রিয় আর্বান ছড়া তৈরি কবিতা চর্চ্চার ভীড়ে গোপনে যারা মূলস্রোতের কবিতা সেঁধিয়ে দিচ্ছিল বাংলা কবিতার শরীরে বিশ্বনাথ পুরকাইত তাদের একজন।
৯০-এর দশকের পুনঃলোকপ্রিয় আর্বান ছড়া তৈরি কবিতা চর্চ্চার ভীড়ে গোপনে যারা মূলস্রোতের কবিতা সেঁধিয়ে দিচ্ছিল বাংলা কবিতার শরীরে বিশ্বনাথ পুরকাইত তাদের একজন।
'খণ্ড-চৈতন্য' নামের এক ফর্মার কবিতা-পুস্তিকাটি গত কয়েক দশকের শ্রেষ্ঠ কবিতা-প্রয়াসগুলির মধ্যেই পড়ে। এবার ভাষালিপি প্রকাশন থেকে বেরলো তার স্বভাবসিদ্ধ অনাড়ম্বর দেড় ফর্মার কবিতা পুস্তিকা 'ভাষাবাহিত রোগশোক', মলাট বিহীন। আর কবিতা? সেই খণ্ড-চৈতন্য থেকে তার অনাড়ম্বর গয়নাগাটিহীন কবিতা-ধারাকে বজায় রেখে উচ্চারণের ঋজুতা এই সব কবিতা-নামের খণ্ড-বিখণ্ড শিরোনামহীন ভাবনাকাতরতা, ভেঙে গড়বার, গড়ে ভাঙবার ছিলা-টান...পাঠককে নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করে। যেন দ্বিধাতুর তবু প্রস্তুত। খুব স্পষ্টভাবে বললে বিশ্বনাথ পুরকাইতের 'খণ্ড-চৈতন্য'ই তার শ্রেষ্ঠ কবিতাপ্রয়াস, তারপর 'খণ্ড-চৈতন্য' সমেত 'মিশ্রপ্রতিক্রিয়া' আর 'ভাষবাহিত রোগশোক' কাব্যভাষা ও চিন্তাপথের নতুন বাঁক।
অনেক কাগজ নষ্ট হলো। সময় আর শ্রম। জানি তবু লেখা হবে, প্রকাশিত হবে কবিতার বই। নব্য প্রকাশক, সম্পাদক, কবি-- কতো কতো পলিটিক্স। শুধু রাজনৈতিক 'কবিতা'টাই নেই। নেই ভাষা দিয়ে, শিল্প দিয়ে কর্তৃত্ববাদের বিপক্ষে দাঁড়ানো। যে গুটি কয়েক কবিতা দাঁড়ায়, বিশ্বনাথ পুরকাইতের কবিতা তারই অংশভাগ।
অনেক কাগজ নষ্ট হলো। সময় আর শ্রম। জানি তবু লেখা হবে, প্রকাশিত হবে কবিতার বই। নব্য প্রকাশক, সম্পাদক, কবি-- কতো কতো পলিটিক্স। শুধু রাজনৈতিক 'কবিতা'টাই নেই। নেই ভাষা দিয়ে, শিল্প দিয়ে কর্তৃত্ববাদের বিপক্ষে দাঁড়ানো। যে গুটি কয়েক কবিতা দাঁড়ায়, বিশ্বনাথ পুরকাইতের কবিতা তারই অংশভাগ।
পরমাণুও অবিভাজ্য নয় জেনে ভয়
বাড়ে— যারা ভাঙন সহ্য করতে পারে
না তাদের কী হবে
এভাবেই শুরু হচ্ছে 'ভাষাবাহিত রোগশোক', আর তারপর
আমলা-পাগলা জীবন কাটাবো, বা বুকের মধ্যে হাত রেখে ঘুমঘোর কিম্বা এই জল শ্রীরাধিকা তাও তো হলো, সুপ্রিয় পাঠক নতুন জগতের খোঁজ কতদূর-- ভাবনার-- চৈতন্যের...?
বইটি পড়েছি। কবিতার 'বই' বোধ হয় এমনই হওয়া 'উচিত'। এই অনুচ্চকিত চলনই বর্তমানে আমার ' কবিতা 'বলে মনে হয়। জোর করে কিছু হইয়ে তোলা নেই, প্রমাণ করার কিছু নেই, চমকে দেওয়ার শিশুখিল্যপনা থেকে মুক্ত এই বই। অথচ পাঠক ' চমকাবে ', কেন এই চমক লাগবে তার? এমন কবিতা কি সে আগে পড়েনি? না, ঠিক তা নয় ; এইভাবে খুব কম লোক কবিতা ' বলতে 'পারে— এই বিরলকে পাওয়ার অনুভূতিই তাকে আশ্চর্য রাখবে।
ReplyDelete