৩২ পেরিয়েঃ প্রশান্ত হালদার
৩৩শে পা। কিবোর্ডের কিছু “কি” কাজ করছে না। তার মধ্যে রয়েছে আমার প্রিয় আবেগ চিহ্ন। সামনের মাসের মাইনে না পাওয়া পর্যন্ত নতুন কিবোর্ডের মুখ দেখা সম্ভব নয়। যাদবপুর ক্যাম্পাসের এটিএম থেকে এমাসের শেষ সম্বল ৫০০ টাকা তুল্লুম। এইটবি থেকে জিএস্টি পরবর্তি ২৪০ টাকায় ওল্ড মঙ্ক ৫০০, চিচিঙ্গে, অম্বল অগ্রাহ্য করা পুঁইশাক কিনে বাড়ি ফিরলুম।
ভদ্রমহিলা ঘুমিয়ে পড়ায় ওনার ভাই ১২টায় উইশ করলো। উনি ১২টা ১৫তে দুটি গোলাপ আমার সামনে রাখলেন।
আমার দুজন মা। একজন সম্ভবত ১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন ৩৮/৪০ বছর বদ্ধ উন্মাদ থাকার পর। জীবিত মা গত ৯ বছর সিজোফ্রেনিয়ার যথার্থ চিকিৎসা পাচ্ছেন। ফলে আগের একদশকেরও বেশি অনিয়মত জীবনের শারিরীক অত্যাচারের উপহার সুদে-আসলে বুঝে পাচ্ছেন। দুজন মা এবং আমাদের পাঁচ ভাই-বোনকে সময় মতো ওষুধ তথা খাদ্য জোগানো বাবা...... আর এক মাস পর যিনি ৭৫এ পা দেবেন। যাঁর সবচে ব্রিলিয়ান্ট সন্তান কুকুরে কামড়ে মারা গেছিলেন ৪০ বছর আগে। যাঁর আরো এক সন্তান মারা যান কয়েকমাস পরেই ব্রঙ্কাইটিসে... যাঁর ৯৯ সালে বাসের ধাক্কায় ১৩ দিন জ্ঞান ছিলনা। ২০০২-এ আবার। উন্নয়নের কাল্ভার্ট মেরামতির মাঝে গভীর রাত্রে ফেরার পথে সাইকেল নিয়ে যিনি বেরিয়ারবিহীন উন্নয়নযজ্ঞে ১২ফুট গর্তে পড়ে যান। যিনি সর্ব্বহারার মুক্তি কামনায় আজো স্বপ্ন দেখেন... সেই বাবার মাতাল, কবিতা করা দুঃস্বপ্নপীড়িত সন্তান আমি। বুর্জোয়া। আমার জন্ম এমন এক ভারতবর্ষে যেখানে কয়েকহাজার বছর ধরে সমস্ত সামাজিক সুবিধাভোগীরা কয়েক হাজার বছর ধরে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে শোষিত মানুষ বা পরিবারকে একটা চাকরি দিয়ে বলতে চাইছে তুমি ব্যাটা হাজার বছরের ঐতিহ্য পেয়ে গেছ এবার আমাদের তৈরি করা মূলস্রোতে ভেসে যাও। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ‘তারপর আছে এসসি/এসটি”, শিক্ষামন্ত্রী বলছেন তফশিলীরা টাকার জন্য কলেজে পড়তে আসে। বিজেপি কোথা থেকে আবার ইনক্লুসিভ রাজনীতির সন্ধান পেয়েছে। গয়লার ছেলের মুখ দিয়ে বলিয়ে নাও “চতুর্বর্ণ ময়া সৃষ্টাং”। ব্যস। গীতা। গীতা। গীতা। নে শালা। সবাই হিন্দু।
Comments
Post a Comment